ডাউন দ্য উইকেটে এসে পোর্ট অফ স্পেনের সীমানায় জহির খানকে উড়িয়ে মারা, লর্ডসে তেড়েফুঁড়ে সেঞ্চুরি উদযাপন, এশিয়া কাপের এক-দুই-তিন-চার কিংবা এই বিপিএল ট্রফি? তামিম ইকবাল মানে কী? তামিম মানে বাংলাদেশের ব্যাটিং ইউনিট, কিংবা অনেকখানি বাংলাদেশের ক্রিকেট।
বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটার কে? যে কয়েকটা নাম আপনার মাথায় আসবে, সবার আগে আসা নামটা হয়ত তামিমই হবে। কিন্তু শুধু ব্যাটার পরিচয়? গণ্ডিটা কি একটু ছোট হয়ে গেলো না? বাড়িয়ে দিচ্ছি, দেশের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা অ্যাথলেটও তো এই তামিমই।
চট্টলার খানের পুরো ক্রিকেট জার্নিটাই একটা গল্প। গল্প এতো ছোট হয়, এ তো রীতিমতো মহাকাব্য!
ঐ যে ইংলিশ সামার। প্রথম ইনিংসে অর্ধশতকের পর লর্ডসের এক কর্মকর্তাকে জানালেন; 'অর্ধশতক করলে নাম লেখানো হয় না?' কর্মকর্তার জবাব, ‘না শতক লাগবে!’ পরের ইনিংসে করলেন তেড়েফুঁড়ে এক শতক। উদযাপনে ছিল ভিন্ন এক মাত্রা। যেন বলতে চাইলেন; 'চিনে নাও আমায়, আর নামটা লিখে রাখো লর্ডসের অনার্স বোর্ডে!'
চট্টগ্রাম টেস্টে খুব পেটাচ্ছিলেন ইংলিশ বোলারদের। লাঞ্চের আগেই পেয়ে যেতে পারতেন শতক, ফিরলেন ৯০ এর আগে। কেভিন পিটারসেন টিপ্পনী কাটলেন; 'এখানে তো খুব মারছো, পারলে ওল্ড ট্রাফোর্ডে এসে দেখিও!' তিনি জানতেনও না, পরের সফরে ওল্ড ট্রাফোর্ডে টেস্ট আছে দলের। কেপি জানতেন ওল্ড ট্রাফোর্ডে এসে ঠিকই খাবি খাবে এরা! পরে তিনি কেপিকেও দিলেন অদৃশ্য এক জবাব, ওল্ড ট্রাফোর্ডেও করলেন যে শতক।
তার শুরুর গানও ছিল শ্রুতিমধুর! জহির খানকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে পোর্ট অব স্পেনের গ্যালারিতে আছড়ে ফেলা৷ যেন জানানো, 'যতক্ষণ উইকেটে আছি মেরেই খেলব!' লম্বা ক্যারিয়ারে পরে অবশ্য খোলস বদলেছেন।
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের বেশিরভাগ রেকর্ডসই তার দখলে। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান সবচেয়ে বেশি ২৫ শতক। একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে ১৫ হাজার রান। ওয়ানডের সর্বোচ্চ রান শতকও কিন্তু তামিমেরই দখলে।
রানে নেই, চারপাশে রব তাকে বাদ দাও। এশিয়া কাপে দলে থাকা নিয়েও নানান অভিযোগ। ফিরলেন টানা চার অর্ধশতকে, ভিন্ন উদযাপনে। ১২ এশিয়া কাপের 'এক দুই তিন চার...'
আরেকবার রান খরা, আরেকবার ছুঁড়ে ফেলো! পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই শতক, এক অর্ধশতকে ফিরলেন। পরের চার বছর শুধু রান বন্যায় ভাসালেন।
একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে করেছেন ৮ হাজার ওয়ানডে রান। নানা পরিসংখ্যান যোগ করাই যায়। যেমন, তামিম ওয়ানডে ক্রিকেটে ৮ হাজার রান করেছেন রাহুল দ্রাবিড়, এডাম গিলক্রিস্ট, ইনজামাম-উল-হক, বীরেন্দর শেওয়াগ, হার্সেল গিবস, কুমার সাঙ্গাকারা, যুবরাজ সিং, টিএম দিলশান, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, সনাথ জয়সুরিয়া, মাহেলা জয়াবর্ধনদের মতো তারকাদের চেয়েও কম ইনিংসে।
স্বপ্ন ছিল থামার আগে যেকোনো ফরম্যাটে দশ হাজার রান করা, ওয়ানডে ফরম্যাটে যা বহু ক্রোশ দূরের পথও ছিলনা।
অবসর, ফেরা, ভাঙন, ক্যাপ্টেনসি ছাড়া, আবার ফেরা, সাময়িক বিশ্রাম। তামিম আবার কবে ফিরবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে? জবাবটা তার কাছেই। বল আসছে, ডট দেবেন নাকি ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়িয়ে মারবেন জবাব তার কাছেই, তার ব্যাটেই।
ছোটবেলায় তামিম নাকি ঘুমানোর আগে রাতে তারা দেখে ঘুমাতেন! কারো কাছ থেকে শুনেছেন, 'আকাশে তারা থাকলে পরেরদিন বৃষ্টি হয় না!' তার মানে, দিনে নিশ্চিত ক্রিকেট খেলা যাবে। অনেক বছর পরেও যখন কেউ এদেশের ক্রিকেট আকাশে তাকাবে ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে জ্বলজ্বল করা তারাটাই হয়ে থাকবেন আপনি! আর লাফ দিয়ে যেন বলতে চাইবেন; 'চিনে নে আমায়, আর নামটা দেখে নে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে!'
হ্যাপি থার্টি ফাইভ, তামিম ইকবাল খান!