৭ এপ্রিল ২০২৪, ১:৫৪ এম
বাংলাদেশের ক্রিকেটে তখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আছে শুরুর দিনগুলোতে। প্রতিপক্ষ যেই হোক না কেন, ম্যাচ শুরুর আগেই খেলোয়াড় থেকে শুরু করে সমর্থন, সবাই ধরেই নিতেন যে ম্যাচটা যেতা সম্ভব। নিজেদের সামর্থ্যের চেয়ে এখানে বড় হয়ে উঠত প্রতিপক্ষ দলের বড় বড় খেলোয়াড় এবং তাদের শক্তিমত্তার ব্যবধান। মাঠে নেমে মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াত আগে ব্যাটিং করলে টেনেটুনে ৫০ ওভার ব্যাটিং করে একটা মামুলি স্কোর করা, আর রান তাড়া করতে গেলেও চিত্রটা একই - ৫০ ওভার ব্যাটিং করা। টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির অনেক দিন পরও বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই সংস্কৃতিটা রয়ে গিয়েছিল। সময়ের পরিক্রমায় ছেলেদের পর মেয়েদের ক্রিকেটেও এই সম্মানজনক পরাজয় বরণ করে নেওয়ার দিনটা শেষ বলেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। ‘হয়েছিল’ বলার কারণ, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত সাদা বলের সিরিজে বাংলাদেশ নারী জাতীয় দলের ক্রিকেট যেন অনেক বছর পিছিয়ে আবার চলে গেছে হারার আগেই হার মেনে নেওয়ার দিনগুলোতে।
পরাজয় তো পরাজয়ই, হোক সেটা ১ রানে বা ২০০ রানে, বা ১ উইকেট বা ১০ উইকেটে। রেকর্ডের পাতায় লিখা থাকবে আপনি হেরেছেন, সেটা ব্যবধান যত ছোট বা বড়ই হোক না কেনো। তবুও কোনো এক কারণে বিশেষ করে উপমহাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের মাঝে ম্যাচ হারলেও পরাজয়ের ব্যবধান কমে এলে বা হেরে যাওয়া ম্যাচে কেউ ব্যাক্তিগত অর্জন করলে তাতে তারা কিছুটা স্বান্তনা খুঁজে নেন।
আরও পড়ুন: হ্যাটট্রিক করেও দল হারায় হতাশ ফারিহা, বিশ্বাস ছিল রান তাড়ায় জেতার
আর সেটার রেশ ধরেই একটা সময়ে ম্যাচের পর ম্যাচ খালেদ মাসুদ পাইলটের শেষের ব্যাটারদের নিয়ে লড়াই, একটা ভালো পুঁজি এনে দেওয়া, মোহাম্মদ রফিকের পিঞ্চি হিটিং বা একটা ফিফটি ও ভালো স্পেল ফলাফল ছাপিয়ে অনেক বড় হয়ে উঠত। দল হেরেছে, তবে চায়ের কাপে ঝড় উঠত এসব নিয়েই। তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা হত এই ভেবে যে, হারলেও ব্যবধান কমে যাওয়ায় মান বেঁচেছে। সেই দিন পেছনে ফেলে বাংলাদেশের পুরুষ দল এখন ধারাবাহিক না হলেও তারা প্রতিটি ম্যাচ খেলতে নামে জয়ের লক্ষ্য নিয়েই। সমর্থকরাও ম্যাচ দেখেন একই আশা নিয়ে।
সেদিন থেকে অর্জনের দিক থেকে অল্প সময়ে বেশি সাফল্য এনে দেওয়া বাংলাদেশের মেয়েরা এই সম্মানজনক পরাজয়ের গণ্ডি বেশ আগেই পার করে ফেলেছিলেন। গেল এক বছরে তো ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাট মিলিয়ে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মত দলকে হারিয়ে দেয়। ফলে প্রতিপক্ষ মহাপরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়া হলেও সবার অন্তত আশা ছিল, লড়াই তো করবেই নিগার সুলতানা-নাহিদা আক্তাররা। ১-২টা ম্যাচে ঘটিয়ে দিতে পারে অঘটনও।
সেই রেশটা ছিল প্রথম ম্যাচে, ওয়ানডেরে। ৭৮ রানে অজিদের ৫ উইকেটে ফেলে ভীষণ চাপ তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু অভিজ্ঞতার জোরে সেখান থেকে বেরিয়ে ২১৩ রান করে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। অধিনায়ক নিগারের ব্যাটে এক পর্যায়ে ২ উইকেটে ৭০ রান ছিল বাংলাদেশের। জয়ের স্বপ্নটা ভালোভাবেই টিকে ছিল। কিন্তু মাত্র ২৫ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে সব আশায় গুড়ে বালি। এরপরও বাকি ছিল ৫টা ম্যাচ। কিন্তু প্রথম ম্যাচের এই ব্যাটিং ধস যেন ভূতের মত তাড়া করে ফিরেছে স্বাগতিকদের।
পরের দুই ম্যাচেও একশ রানের কমে অলআউট হয় বাংলাদেশ। সন্দেহ নেই, অস্ট্রেলিয়ার এই দলে আছেন দাপুটে ও অভিজ্ঞ সব ক্রিকেটার। তাই বলে এতোটা খারাপ খেলারও তো যুক্তি নেই। ৫০ ওভারের সিরিজে স্রেফ উড়ে গিয়ে নিগার বলেছিলেন, মনের বাঘেই খেয়ে ফেলেছে তাদের। প্রতিপক্ষ শিবিরের সব বড় বড় নাম দেখে মানসিকভাবেই তার দল পিছিয়ে গেছে। ফলে মাঠে নামার আগেই যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গেছে তাদের।
ফলে ওয়ানডের শেষ দুই ম্যাচে বাংলাদেশ দল খেলেছে ‘প্রস্তর’ যুগের ক্রিকেট। বোর্ডে নেই রান, কিন্তু ব্যাটারদের উদ্দেশ্য হচ্ছে শুধু ৫০ ওভার খেলা। সাহসী ব্যাটিং করার চেষ্টাটাও দেখা যায়নি তাদের মধ্যে। সেরা সব বোলারদের পাল্টা-আক্রমণ করে একটু ভড়কে দেওয়ার চেষ্টাটাও করেননি কেউ। যেন তারা আগেই মেনে নিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ার এই দলের বিপক্ষে তাদের কোনো সুযোগই নেই। সতীর্থদের এহেন পারফরম্যান্সে হতাশ নিগার বলেছিলেন, তারা সামর্থ্যের ১০ ভাগও দিতে পারেননি। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে, এই ব্যর্থতার কারণটা কী? জেতার বিশ্বাস কি ছিল তার দলের?
টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ম্যাচে অন্তত ব্যাট হাতে নিগার চেষ্টা চালান লড়াইয়ের। করেন দুই সিরিজের ছয় ম্যাচ মিলিয়ে বাংলাদেশের একমাত্র ফিফটি। কিন্তু সেদিন আবার বোলাররা খেই হারালেন। তাতে ১০ উইকেটের জয় পেল অস্ট্রেলিয়ার। পরের দুই ম্যাচে আগে ব্যাটিং করে অস্ট্রেলিয়া ১৫০ প্লাস স্কোর পাওয়ার পরই সমর্থকদের মত ক্রিকেটাররা যেন মেনেই নেন, মিরাকল ঘটারও সুযোগ নেই।
ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে, ২০ ওভার ব্যাটিং করার মন্ত্র জপে ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। সেটাও সফল হয়নি অবশ্য। সাথে জুটেছে আরও দুটি বড় পরাজয়। ছয়টি ম্যাচের বাংলাদেশের ব্যাটারদের আউটগুলো বিশ্লেষণ করলে এটা স্পষ্ট, বেশ কিছু নিরীহ বলেও তাদের আউট হওয়ার মূল কারণ মানসিকভাবে আগেই হেরে বসা। নাহলে হুট করে টানা ছয় ম্যাচ এত বাজে খেলার মত দল তো তারা নন।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়া সিরিজের শিক্ষায় ভারতের বিপক্ষে ভালো খেলার আশা বাংলাদেশের
কিন্তু সেই সম্মানজনক পরাজয়ের লক্ষ্যে খেলাটাই তাদে জন্য কাল হয়েছে। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে দারুণ বোলিংয়ে দ্বিতীয়বারের মত এই ফরম্যাটে হ্যাটট্রিক করেন ফারিহা তৃষ্ণা। দারুণ কীর্তি বটে, তবে তার দল তো হেরেছে। সেই ম্যাচ, এমনকি সিরিজে শেষেও ফারিহাকে নিয়ে মাতামাতি বলে দেয়, দলগত ব্যর্থতা অনেকটাই আড়ালে চলে গেছে ব্যক্তিগত অর্জনের মালায়। দল হিসেবে এটা বাংলাদেশের জন্য বিশ্বকাপের বছরে অশনি সংকেতই বটে।
সামনেই বাংলাদেশে আসছে ভারত। গত বছর তাদের বিপক্ষে লড়িয়ে মানসিকতা দেখিয়েছিল নিগারের দল। অস্ট্রেলিয়ার সিরিজের ব্যর্থতা ভুলে ভারতের মেয়েদের বিপক্ষে দারুণ করতে হলে তাদের আবার ফিরে যেতে হবে সেই মানসিকতায়। মাঠে নামার আগেই হার নয়, শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে হবে - এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে খেললেই কেবল ধরা দিতে পারে ইতিবাচক ফলাফল। কারণ, সম্মানজনক পরাজয় একটা দল হিসেবে কেবল পিছিয়েই দিতে পারে এবং জেতার বিশ্বাসটাও তাতে ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসবে।
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩৩ পিএম
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৬ পিএম
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৪ পিএম
আরও পড়ুন
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার আশা শেষ ইউনাইটেডের |
“ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দল কতটা ভালো করতে পারবে, তা নিয়ে সন্দিহান দেশের একমাত্র উয়েফা ‘এ’ লাইসেন্সধারী কোচ।”