৭ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৮ এম
বাংলাদেশে যখন আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলতে কোনো দল আসে, তখন শুরুর কয়েকদিনেই এটা একরকম ধারণা পাওয়া যে দলটির খেলোয়াড়দের সাক্ষাৎকারের সুযোগ ঠিক কতটুকু মিলতে পারে। বাংলাদেশের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার নারী জাতীয় ক্রিকেট দলের সদ্য সমাপ্ত সাদা বলের সফরে অবশ্য কিছুটা দ্বিধাই তৈরি হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়া ম্যানেজার লুসি উইলিয়ামস শুরুতে কিছুটা আশা দিয়েছিলেন যে হবে হবে। বলেছিলেন, এক-দুইটা মাচ যাওয়ার পর এলিসা পেরি বাদে অন্য খেলোয়াড়দের সাক্ষাৎকার নেওয়ার অনুমতি মিলবে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। পরের ম্যাচ, অনুশীলনের পর এসব বলে দেখতে দেখতে অস্ট্রেলিয়ার সফরই শেষ হয়ে যায়। তৃতীয় টি-টোয়েন্টির আগে লুসি সরাসরি বলে দেন, এই সফরে আর সাক্ষাৎকার সম্ভব না। মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে তিনি অবশ্য বেশ আন্তরিক ছিলেন, অস্ট্রেলিয়া দলের সদস্য হলেও পুরো সফরেই লুসি যথেষ্ট বিনয়ের পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা আর করে দিতে পারলেন না স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে।
অস্ট্রেলিয়ার এই দলে তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটেও এলিসা পেরি অনেক বড় এক নাম। স্বাভাবিকভাবেই তাকে ঘিরেই সবার আগ্রহ ছিল সবচেয়ে বেশি। অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ পা রাখতেই সবচেয়ে বেশি সাক্ষাৎকারের অনুরোধ জমা হয় তার জন্যই। ‘ভিড়’ এড়াতে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক অ্যালিসা হিলির ব্যাপারে কয়েক দফা বলা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়া ম্যানেজারকে। তিনি এবং হিলি দুজনই তাতে সম্মতি দিলেও টি-টোয়েন্টি শুরুর ঠিক আগ দিয়ে অজানা কারণে বদলে যায় তাদের অবস্থান।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ার সাথে ‘সম্মানজনক পরাজয়ের’ স্মৃতি ফিরিয়ে আনল বাংলাদেশের মেয়েরা
এমন কিছু আগে হতে পারে বলে ধারণা থাকায় সফর চলাকালীন অস্ট্রেলিয়ার অনুশীলনে পাখির চোখ রাখতে হয়েছিল। সেখান থেকেই টুকরোভাবে কয়েকজনের ‘মিনি সাক্ষাৎকার’ নেওয়ার প্রচেষ্টা ছিল। সেটাই এখানে তুলে ধরা হল।
ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে টানা কয়েকদিন মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুশীলন করেছিল অস্ট্রেলিয়ার। সেখানেই ব্যাটিং শেষে ফেরার পথে অ্যাশলে গার্ডনারের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়, “দুটি সিরিজ জয়ের ব্যাপারে কতটুক আশাবাদী?” এক গাল হেসে তার সোজাসাপ্টা উত্তর, “জেতার জন্যই তো এসেছি। প্রতিটা ম্যাচেই জিততে চাই। আশা করি পারব।”
এরপর প্রথমবার বাংলাদেশে খেলার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে গার্দনার বলেন, “গরমটা একটু সমস্যা করতে পারে, তবে মানিয়ে নিতে পারব। আর দেশ হিসেবে বললে যা শুনেছি তার চেয়ে তো ভালোই লাগছে বাংলাদেশকে।”
প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে বাংলাদেশকে চমকে দেন লেগ স্পিনার আলানা কিং। মূলত তার শেষের দিকে ক্যামিওতেই একশর আগেই ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে থাকা অজিরা ২১৩ রান করে শেষ পর্যন্ত। এরপর বল হাতেও ভেল্কি দেখান আলানা। দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে অনুশীলনে আগে ব্যাটিংই করেন তিনি। বোলিং করার আগে কিছুটা সময় কাটান জিমে। তখনই তাকে কিছুটা সময়ের জন্য পাওয়া যায়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে হেসে ফেলা আলানাকে প্রশ্ন করার অনুমতি নিয়ে মাঠে ও মাঠের বাইরে হাসির রহস্য জানতে চাইলাম। প্রশ্ন শুনে তার হাসি যেন আরও বেড়ে গেল। এরপর বললেন, “হাসতে ভালো লাগে, তাই হাসি। ক্রিকেট খেলতে যেমন ভালোবাসি, হাসতেও ভালোবাসি।” ভালো কথা, কিন্তু এই মারকুটে ব্যাটিংয়ের রহস্য কি? “তেমন কিছু না, মারলাম, আর হয়ে গেল।” হাসতে হাসতেই জিমের দিকে চলে যান আলানা।
দ্বিতীয় ওয়ানডের দিন জন্মদিন ছিল হিলির। তাকে কিছুটা চমকে দিতে ম্যাচের পর পুরুষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে সামান্য এক উপহার দেওয়া হয়েছিল। সেটা পেয়ে তিনি ভীষণ অবাক হয়েছিলেন, খুশিও, কারণ জন্মদিনে আর কোনো উপহার নাকি পাননি৷
নিজেই আগ বাড়িয়ে এই রিপোর্টারকে করলেন কিছু প্রশ্ন। সেখানেই টুকটুক আলাপচারিতায় তার কাছে জানতে চাওয়া, অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক হওয়াটা কতোটা স্পেশাল অনুভূতির। এক গাল হেসে হিলির জবাব, “নিজেকে দেশের প্রেসিডেন্ট মনে হয়। স্বপ্নময় লাগে প্রতিদিনই।”
হিলির স্বামী মিচেল স্টার্ক ছেলেদের ক্রিকেটের এক কিংবদন্তি। অর্জনের দিক থেকে দুজন ছুটছেন পাল্লা দিয়ে৷ তবে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কত্ব করার দিক থেকে স্টার্ককে পেছনে ফেলে দিয়েছেন হিলি। এটা নিয়ে মজা করেন? “নাহ, আমি শুধু ওকে বলি বাড়িতে আমাকে যেন ক্যাপ্টেন বলে ডাকে!” সদা হাস্যোজ্জ্বল হিলি নিজের কথাতে নিজেই যেন হাসির রসদ পেয়ে গেলেন।
টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে অবশেষে ক্ষনিকের জন্য পাওয়া যায় পেরিকে। অনুশীলন শেষে বেরিয়ে যাওয়ার পথে বেরিয়ে নাম ধরে ডাক দিতেই ঘুরে দাঁড়ান। নো সেল্ফী প্লিজ বলতে চাচ্ছিলেন, তার আগেই জানাই ছবি নয়, একটা সাক্ষাৎকার চাই। “যা বলার এখনই বলুন, সাক্ষাৎকার হবে না।”
আরও পড়ুন: ‘২ বছরের মধ্যে নারী দল সেরাদের কাতারে যাবে’
সময় নষ্ট না করে তাই জানতে চাওয়া, “বাংলাদেশ কেমন দেখছেন আর কোন খাবারটা ভালো লাগলো?” কিছুটা চমকে পেরি বলেন, “বেড়ানোর সুযোগই তো পাচ্ছি না। হোটেলেই আটকা পড়ে আছি। শুনেছি দেশটা সুন্দর, একবার আসবো শুধু বেড়াতে। আর বাংলা খাবার তো সেভাবে খেতে পারিনি। সেদিন মিষ্টি খেয়েছিলাম, ওটা ভালো ছিল।, এইতো।”
খানিক বাদে একাডেমি মাঠের দিকে ছুটছিলেন জর্জিয়া ওয়ারহাম। একটা প্রশ্ন করতে চাই বলায় থেমে সম্মতি জানালেন। “লেগ স্পিনারদের জন্য একটা পরামর্শ দিতে বললে কি বলবেন?” পছন্দের বিষয়ে প্রশ্নটা করার ওয়ারহাম উত্তরটা দিলেন বড় করেই। “এক লাইনে তো এটা বলা কঠিন। তবে আমি বিশ্বাস করি, বেশি বেশি বোলিং করার কোনো বিকল্প নেই। শেন ওয়ার্নকেই শুনতাম, হাজার হাজার বল করে ফেলেছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসার আগেই। শুধু বল করে যাও, যেখানেই হোক।’’
ওয়ারহামের এই পরামর্শ যেন বাংলাদেশের লেগ স্পিনার নিয়ে চিরন্তন হাহাকার মেটানোর একটা বার্তা। ভালো লেগ স্পিনার হওয়ার কোনো শর্টকাট নেই, স্রেফ বোলিং করে যেতে হবে। মাঠের ক্রিকেট ও মাঠের বাইরের উপস্থিতি, সব মিলিয়ে পুরো সফরে অস্ট্রেলিয়ার নারী জাতীয় ক্রিকেট দল নিগার সুলতানা জ্যোতিদের এমন অনেক শিক্ষাই দিয়ে গেছেন, যা হতে পারে তাদের সামনের দিনের পাথেয়।
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩৩ পিএম
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৬ পিএম
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৪ পিএম
আরও পড়ুন
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার আশা শেষ ইউনাইটেডের |
“ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দল কতটা ভালো করতে পারবে, তা নিয়ে সন্দিহান দেশের একমাত্র উয়েফা ‘এ’ লাইসেন্সধারী কোচ।”