২৬ জুন ২০২৪, ১০:২৭ এম
নাহ, বাংলাদেশের সাথে পর্তুগালকে মোটেও মেলানো হচ্ছে না। যে শিরোনামটা দেখছেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পাশাপাশি একই সময়ে ইউরো চলছে বলেই সেটা দেওয়া হয়নি মূলত। এর সাথে বড় একটা সংযোগ রয়েছে এবারের ইউরোর ফরম্যাটও, যেখানে ফিরে এসেছে একটা গ্রুপের কোনো দলের কোনো ম্যাচও না জিতে নকআউট পর্বে খেলার। ফরম্যাটের যে ফাঁকফোকর গলিয়ে জোড়াতালি দিয়ে গ্রুপ পর্ব পার করা পর্তুগাল শেষ পর্যন্ত জিতে ফেলেছিল ইউরো ২০১৬। আচ্ছা থাক, অতদূর নাই যাই বরং। যাদের নিয়ে মূল আলোচনা, তারা নিজেরাই তো মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানোর সুযোগ পেয়ে খাঁচাবন্দী হয়ে থাকতে চায়!
পর্তুগাল সেবার গ্রুপ পর্বে প্রথম দুই ম্যাচে দুই পয়েন্ট নিয়ে ছিল খাঁদের কিনারায়। তবে শেষ ম্যাচে কোনোমতে ড্র করে ফেলে তারা। গ্রুপের তৃতীয় হওয়া সেরা চারটি দলের একটি হয়ে তাতে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর দল চলে যায় পরের রাউন্ডে। বাকিটা তো যেমনটা বলা হয়, ইতিহাস…
বাংলাদেশের সামনেও কী নতুন করে ইতিহাস গড়ার হাতছানি ছিল না? সুপার এইটে এসে একটা দলের কোচ সরাসরি ঘোষণা করে দিলেন, যথেষ্ট হয়েছে। এখন যা পাবো তাই বোনাস। তার দল দুই ম্যাচে স্রেফ উড়ে গেল অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের কাছে। বলা ভালো, মাঠে নামার আগেই যেন হেরে বসেছিল বাংলাদেশ। এরপরও অভাবনীয়ভাবে আফগানিস্তান হারিয়ে দিল অস্ট্রেলিয়া, রোহিত শর্মা তুললেন স্মরণীয় এক ঝড়, যা অজিদের হারানোর পাশাপাশি বাংলাদেশকেও করে দিল সুযোগ - আফগানদের সমীকরণ মেনে হারাও আর ইতিহাস রচনা করো।
এরপর আফগানিস্তানের ব্যাটাররাও পারলেন না দাপট দেখাতে। বোলাররা এমন একটা টার্গেট এনে দিলেন, বিশ্বাস ও সাহস রেখে ব্যাটিং করলে ১২ ওভারে সেই রান আপনি তাড়া করতে পারবেন অধিকাংশ দিনেই। কিন্তু পুরো দুনিয়া আপনার পাতে খাবার তুলে দিলেও আপনি যদি খাবারটা নাই হজম করতে পারেন, তাহলে তো সব আয়োজনই বৃথা। বাংলাদেশ দলের অবস্থাটা ঠিক তেমনই হয়েছে গোটা ইনিংসে।
এই ফরম্যাটে যিনি দলের সেরা ব্যাটার, তিনি নামলেন ছয়ে! যার এই ফরম্যাটে বিশেষ করে এই ম্যাচে কোনোভাবেই পাওয়ার প্লেতে ব্যাটিং করা উচিত নয়, তিনি নামলেন তিনে। আর ক্রমশ ব্যাটিং করতেই ভুলে যাওয়া ব্যাটার নামলেন পাঁচে! যার খ্যাতি ফিনিশার হিসেবে, তিনি ম্যাচের এমন সময়ে এমন গা বাঁচানো ব্যাটিং করলেন, তাতে প্রশ্ন জাগতেই পারে, দল বা তিনি নিজেও কি একটিবার সেমিফাইনাল খেলার আশা করেননি?
অবশ্য দলপতি নাজমুল হোসেন শান্ত যা বলেছেন, তাতে নির্দিষ্ট কোনো ব্যাটারকে দোষারোপ করাটা অন্যায়ই বটে। প্রথম তিন উইকেটে মেরে খেলা, আর সেটা না হলে সেমিফাইনালের আশা বাদ দিয়ে জয়ের জন্য খেলা - এটাই নাকি চাওয়া ছিল বাংলদেশ দলের। আর সেটা ব্যাটিং নামার আগেই! নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলতে ১০ উইকেট হাতে নিয়ে ৬৩ বলে আপনাকে করতে হবে ১১৬ রান, সেটা করার আশা আপনি স্রেফ তিন উইকেটেই বিসর্জন দিয়ে দিলেন! পর্তুগাল ফুটবল দলের কথা বলছিলাম, তাদের ক্রিকেট দলকেও যদি আপনি একই জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিন, এটা নিশ্চিত তারাও প্রাণপণ চেষ্টা করবে। মেরে খেলবে প্রথম বল থেকে। কোনোভাবেই ১৯ বলে ৪৩ প্রয়োজন থাকা অবস্থায় পাঁচটা বল ডট দেবে না!
কিন্তু বিস্ময়ের জন্ম দিয়ে বাংলাদেশ ঠিক সেটাই করেছে। লিটন দাস প্রথম ওভারে যেভাবে চার-ছক্কা মেরে শুরু করেছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল তিনি সেমির স্বপ্ন নিয়েই ব্যাট চালাবেন আজ। কিন্তু তিন উইকেট যাওয়ার পর হয়ত তার কাছেও বার্তা গেছে, ধীরগতিতে খেলে ম্যাচ জিতিয়ে আসো। কারণ সাত ম্যাচের চারটিতে জিতে বিশ্বকাপ অভিযান শেষ করা তো কম নয়!
কিন্তু ভাগ্য তো সাহসীদের পক্ষেই থাকে। বাংলাদেশ ইতিহাস গড়ার জন্য অনেক আগেই হাল ছেড়ে দিলেও আফগানিস্তান এক মুহূর্তের জন্য লড়াই থেকে সরে আসেনি। এমনকি তখনও, যখন শেষ এক দফায় বৃষ্টিতে খেলা বন্ধের ঠিক আগের বলে তাসকিন আহমেদ পাগলাটে শটে বোল্ড হলেন। ওই সময়ে তাসকিন যদি আউট না হতেন আর খেলা পুনরায় শুরু না হতো, বাংলাদেশ জিতে যেতো দুই রানে। কিন্তু রশিদ-নাভিন-নবীরা তো মাঠে নেমেছিলেনই ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন বুকে চেপে। প্রথমে বাংলাদেশকে সমীকরণ থেকে বাদ দেওয়ার পর শেষ বিন্দু দিয়ে লড়ে তারা বিদায় করেছে অস্ট্রেলিয়াকেও। কারণ, তাদের সেই বিশ্বাসটা ছিল। তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে পেরেছিলেন, এটা সম্ভব। আর বাংলাদেশ? তিন উইকেট যেতেই তো সব শেষ!
পর্তুগালের কথা বলছিলাম শুরুতে, এই দলটির গত ১০-১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল দল ছিল সম্ভবত সেবারই। পুরো আসরে একাই টেনেছিলেন রোনালদো। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে আশা যোগান, আমরাও পারি। সেটা এতোটাই প্রবল ছিল যে, ফাইনালে রোনালদো চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ার পরও একটা ভাঙাচোরা দল নিয়েই ফ্রান্সকে হারিয়ে দেয় পর্তুগাল। মাঠে না খেলতে পারলেও চিৎকার চেঁচামেচি করে টাচলাইন থেকে দলকে সেদিন সাহস দিয়ে গেছেন রোনালদো। ক্লান্ত সতীর্থরা একটু বিশ্রাম নিতে চাইলে তাদের ধাক্কা দিয়ে মাঠে পাঠিয়েছেন, কারণ ইতিহাস গড়তে হবে, দেশের জন্য গর্ব বয়ে আনতে হবে।
শান্তর সামনেও ভাগ্যদেবী নিয়ে এসেছিলেন রোনালদোর মতো অনুপ্রেরণাদায়ী নেতা হওয়ার, বাংলাদেশকে নিয়ে পর্তুগালের মতো ইতিহাস গড়ার। কিন্তু তিনি হয়তো সেই সাহসটাই করতে পারেননি, বা নিজেদের সেই সামর্থ্য আছে বলেই বিশ্বাস রাখতে পারেননি। আর তাই, হারার অনেক আগেই হেরে বসেছেন। একটা অর্থহীন জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করতে চেয়েছেন, সেটাও আর জোটেনি। প্রকৃতি সুযোগ করে দিয়েছিল দুহাত ভরে নেওয়ার, কিন্তু শান্তরা ফিরলেন খালি হাতেই।
অবশ্য চান্দিকা হাথুরুসিংহে বলতেই পারেন, বোনাস নিয়ে এত মাতামাতি কিসের! আর সেদিক থেকে তিনি একবিন্দুও ভুল নন। তিনি ও তার দল তো সেমিফাইনালে খেলার সমীকরণ মেলাতেই চাননি। অযথাই সমর্থকদের অন্যায় দাবি কেনইবা তারা মেটাতে চাইবেন!
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩৩ পিএম
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৬ পিএম
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৪ পিএম
আরও পড়ুন
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার আশা শেষ ইউনাইটেডের |
“ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দল কতটা ভালো করতে পারবে, তা নিয়ে সন্দিহান দেশের একমাত্র উয়েফা ‘এ’ লাইসেন্সধারী কোচ।”