ম্যাচের শেষের দিকে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে টনি ক্রুসকে কার্লো আনচেলত্তি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতেই দাঁড়িয়ে গেল পুরো সান্তিয়াগো বার্নাব্যু। সতীর্থরা একে একে এসে আলিঙ্গন করে বিদায় জানালেন তাকে। আবেগের বহিঃপ্রকাশ সেভাবে ঘটান না আ এই জার্মান। তবে এদিন তার মাঠ ছাড়ার ধাপ গুলো অনেক লম্বাই হয়ে গিয়েছিল। এই মাঠ থেকে যে খেলোয়াড় হিসেবে এটাই তার শেষ পথচলা। দর্শকদের প্রতি সম্মান জানিয়ে হাত নেড়ে দর্শক সাড়িতে দেখা পেলেন তিন সন্তানের, যারা সবাই কাঁদছে। স্টেডিয়ামে উপস্থিত প্রায় সবার চিত্রটাই এদিন ছিল এমনই। রিয়ালের বিখ্যাত এই সাদা জার্সিতে ঘরের মাঠে যে আর দেখা যাবে না সময়ের অন্যতম সেরা এই মিডফিল্ডারকে…
একাডেমির খেলোয়াড় না হলেও দশ বছরের পথচলায় সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে তো ঘরের ছেলেই হয়ে গেছেন ক্রুস। ক্লাবটির হয়ে নিজেদের মাঠে তার শেষ ম্যাচে তাই আবেগের বাঁধ যেন দুমড়েমুচড়ে গেল। ‘জার্মান স্নাইপারের’ বিদায়ী মঞ্চে যেদিকেই চোখ গেছে, দেখা মিলেছে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়া সব ভালোবাসার নিদর্শন। যেখানে হাহাকার একটাই, কেন এত তাড়াতাড়ি এই বিদায়!
আরও পড়ুন: অবসরের পর জিদানের সাথে একই দলে খেলার আশায় ক্রুস
রিয়াল বেশ আগেই লা লিগা চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় শনিবার রাতে বেতিসের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল স্রেফ আনুষ্ঠানিকতার। তবে ক্রুসকে মাঠে উপস্থিত থেকে বিদায় জানানোর সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি ভক্তরা। ফলে নিয়মরক্ষার ম্যাচেও বিক্রি হয়ে যায় ৮০ হাজারের বেশি টিকেট। সান্তিয়াগো বার্নাব্যু ম্যাচ শুরুর বেশ আগে পূর্ণ হতে শুরু করে।
ক্রুস এখনও ঠিকঠাক মত স্প্যানিশ বলতে পারেন না৷ ঠিক এই কারণেই অনেক খেলোয়াড়কে আপন করে নিতে পারেনি রিয়ালের স্প্যানিশ সমর্থকরা। তবে স্রেফ বল পায়ে বছরের পর মন্ত্রমুগ্ধ করা পারফরম্যান্স দিয়ে ভাষার সেই ঘাটতি পুরোটা পুষিয়ে নিয়েছেন তিনি। ফলে তাকে বিদায় জানাতে নিয়ে আসা ব্যানার-ফেস্টুনে উপচে পড়ে ভক্তদের ভালোবাসার ঢেউ। দেখা মেলে ক্রুসের ছবি সম্বলিত বিশাল এক টিফোরও।
তবে সবকিছু যেন ছাপিয়ে যায় এক ক্ষুদে ভক্তদের ব্যানারে। যেখানে লিখা ছিল, “রেফারি, শেষ বাঁশি বাজাবেন না, নাহলে ক্রুস আমাদের ছেড়ে চলে যাবে।”
ম্যাচ শুরুর আগে গা গরমের সময় থেকেই সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে শুরু হয় ‘ক্রুস, ক্রুস’ চিৎকার। ক্যামেরা খুঁজে নেয় ক্রুসের তিন সন্তানকে, সবাই পরিহিত ছিল বাবার বিখ্যাত ৮ নম্বর জার্সি। এরপর কিক অফের আগে দুই দলের খেলোয়াড়রা গার্ড অব অনার দেন ক্রুসকে। রিয়ালের সব খেলোয়াড়রা পড়েন ক্রুসের নাম ও ৮ নম্বর সংবলিত জার্সি।
পুরো স্টেডিয়াম দাঁড়িয়ে সম্মান জানায় বিশ্বকাপ জয়ী এই তারকাকে। ভিআইপি স্ট্যান্ডে উপস্থিত ছিলেন রিয়ালের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। তুমুল কড়তালির মধ্যে বরাবরই নিরাবেগ ক্রুসও যেন থমকে যান ক্ষনিকের জন্য। চোখ বন্ধ করে চেষ্টা করেন সবটুকু ভালোবাসা ভেতরে ধারন করতে। এত বছরের চেনা এই ঠিকানায় খেলোয়াড় হিসেবে এটাই যে তার শেষ কিছু মূহুর্ত। এরপর দুহাত তুলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আগত দর্শকদের প্রতি।
এমন একটা ম্যাচে পারফরম্যান্স খুব একটা বড় বিষয় থাকে না আর। তবে ক্রুস তো ক্রুসই। গোলশূন্য এই ম্যাচে প্রায় সব পরিসংখ্যানে দলের সেরা পারফর্মার ছিলেন তিনিই। সবসময়ই বলেছেন, শীর্ষ থেকেই বিদায় জানাতে চান। এমন একটা পারফরম্যান্স বলে দেয়, চাইলে আরও কটা বছর এমন শীর্ষ মানের ফুটবল খেলা তার পক্ষে সম্ভব ছিল।
৮৬তম মিনিটে যখন ক্রুকে তুলে নেন আনচেলত্তি, ধীরে ধীরে মাঠ ছাড়ার প্রতিটি মুহূর্তই যেন ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন তিনি। ক্লাবটি যে তার পরম ভালোবাসার জায়গা। জার্সিতে রিয়ালের ব্যাজে হাত দিয়ে বারবার যেন বোঝাতে চাইলেন, রিয়াল থেকে যাবে আমার হ্রদয়ে।
আরও পড়ুন: ট্রেন্ড গড়লেন, ট্রেন্ডিংয়েও এলেন ‘ওল্ড স্কুল’ টনি
মাঠ ছেড়ে কোচ, সতীর্থ ছাড়াও সবার সাথে একে একে করমর্দন করে ক্রুস এগিয়ে যান তার সন্তানদের কাছে। যাদের মধ্যে একজন অঝোরে কেঁদেই যাচ্ছিল। বাবাকে এই মাঠে আর খেলতে দেখা যাবে না, কোটি কোটি রিয়াল ভক্তদের মত সেও যেন তা মানতেই চায় না। ম্যাচ শেষে ক্রুসও বলেছেন, “আমার মেয়ে রিয়াল মাদ্রিদকে অনেক ভালবাসাসে, ও প্রায় সব ম্যাচই দেখে। বাচ্চাদের প্রতিক্রিয়া আমাকে শেষ করে দিয়েছে, বিশেষ করে আমার মেয়ের কান্না।”
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে এদিন চোখের জলে ভিজেছেন আরও অনেকেই। এত তাড়াতাড়ি যে ক্রুসকে বিদায় জানাতে চাননি তারা। যেমনটি তারা চাননি ২০০৬ সালেও। সেবার ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে থেকে রিয়ালের জার্সিতে খেলেই অবসরে যান কিংবদন্তি মিডফিল্ডার জিনেদিন জিদান। ১৮ বছর পর আরও একজন মিডফিল্ডার একই ছন্দে থেকে একই মাঠ থেকে বিদায় নিলেন সবাইকে কাঁদিয়ে।
রিয়ালের হয়ে আর একবারই দেখা যাবে ক্রুসকে। ম্যাচটি হবে আগামী ১ জুন বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল। লস ব্লাঙ্কোসদের হয়ে ২৩তম শিরোপা জিতেই তাই শেষটা রাঙাতে চাইবেন তিনি। পারবেন তো ক্রুস?
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯:১৮ পিএম
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৪ পিএম
বাংলাদেশের লক্ষ্য এখন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা |
“দুই সেশনেও নেই সাকিব, শেষ সেশনে কি দেখা যাবে”