রেফারি শেষ বাঁশি বাজালেন। এরপর বাংলাদেশের ফুটবলাররা নিজেদের আর আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। একে একে প্রায় সবাই লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। আরও একবার হতাশাই সঙ্গী বাংলাদেশের। দারুণ ফুটবল খেলেও যে শেষের হিসাবটা আর মেলাতে পারল না হাভিয়ের কাবরেরার দল।
বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে ঘরের মাঠ কিংস অ্যারেনায় বাংলাদে ফিলিস্তিনের কাছে হেরেছে ১-০ গোলে। পুরো ম্যাচ সমান তালে লড়ে গেলেও শেষের এক ভুলের মাশুলই গুণতে হয়েছে হাভিয়ের কাবরেরার দলকে।
প্রথমার্ধে এদিন দু’দলই শুরু করেছে কিছুটা ঢিমেতালে। যেন দুই দলই মাঠে নেমেছে কোনো ধরনের ভুল না করার মন্ত্র নিয়ে। অবশ্য বাংলাদেশ সেদিক থেকে বেশিক্ষণ নিজেদের থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেনি। ছয় থেকে ২০ মিনিটে প্রায় ছয়টি ফাউল তারই প্রমাণ।
আরও পড়ুন: দুই পরিবর্তন নিয়ে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
এক্ষেত্রে ডিফেন্ডারদের কৃতিত্ব দিতেই হয়। ফিলিস্তিনকে বেশ কিছু সেট পিস পেলেও তপু বর্মন, শাকিল হোসেনরা নিজেদের কাজটা করেছেন ঠিকঠাক ভাবেই। আগের দিন হাইলাইন ডিফেন্ডিংটা করতে গিয়ে গোলমাল লাগিয়ে ফেললেও এদিন সেটা খুব একটা দেখা যায়নি।
ম্যাচের ১২ মিনিটে দেখা মেলে প্রথম অন টার্গেট শটের। ফ্রি কিক থেকে মোহাম্মদ রাশিদের নেওয়া শট সরাসরি চলে যায় মিতুল মারমার কাছে। বাংলাদেশ গোলকিপার সেটিকে ঠিকঠাক নিজের নাগালে নিতে পারেননি। তবে শাকিলের দৃড়তায় সেযাত্রায় বেঁচে যায় বাংলাদেশ।
২২ মিনিটে বাংলাদেশের মেলে প্রথম সুযোগ। তপু বর্মন ডিফেন্স থেকে লম্বা করে বাড়ান, ফাহিম সেটি বেশ ভালোভাবে নাগালেও নিয়েছিলেন, তবে বক্সে রাকিবের উদ্দেশ্যে তিনি যে বলটা বাড়িয়েছেন তা যায় বেশ ওপর দিয়ে।
বল পজিশনে ফিলিস্তিন বাংলাদেশ থেকে বেশ এগিয়ে ছিল। তবে দুপরের কড়া রোদ দুদলের ফুটবলারকেই ভুগিয়েছে বেশ। তাই বারবারই দুই দলই কমিয়েছে বেশ গতি। ৪৪ মিনিটে ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগ মেলে বাংলাদেশের। জামাল ভূঁইয়ার অসাধারণ থ্রু বল ডি বক্সের ভিতর পেয়ে যান ফাহিম। সামনে ছিল শুধুই ফিলিস্তিন গোলকিপার রামি হামাদা। ফাহিম অবশ্য শটও নিয়েছিলেন, তবে সেটা দারুণভাবে দুই পা ছড়িয়ে আটকে দেন হামাদা।
গোল মিসের এই হতাশা নিয়েই শেষ হয় প্রথমার্ধ। তবে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হয় বাংলাদেশের ভুল দিয়ে। পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত কিছু সেভ করা বাংলাদেশ গোলরক্ষক মিতুল অনেকটা শিশুতোষ ভুলই করে বসেন। শাকিল হোসেনকে পাস দিতে গিয়ে ভুলে সেটা দিয়ে বসেন দাবাঘকে। অবশ্য যেমন ভুল মিতুল করেছেন, ঠিক তেমন মিসটাও করেছেন দাবাঘ। নষ্ট হয় সফরকারীদের ভালো একটি সুযোগ।
তবে এরপরই দেখা মেলে অন্য এক বাংলাদেশের। টানা দশ মিনিট ধরে একের পর এক আক্রমণ চলতে থাকে বাংলাদেশের। তবে শেষ পাসটাই হিসাব মেলাতে দেয়নি কাবরেরার দলকে।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিন-বাংলাদেশ প্রিভিউ: যা জানতে চাইবেন আপনি
তবে বাংলাদেশের এমন আক্রমণের মধ্যেই সুযোগ আসে ফিলিস্তিনের সামনে। ৫৭ মিনিটে বাংলাদেশকে বড় বাঁচা বাঁচিয়ে দেন মিতুল। দাবাঘের অসাধারণ হেড অনেকটা লাফিয়ে উঠে ফিরিয়ে দেন মিতুল। এই দারুণ সেভটা করে যেন আগের ভুলটার পারশ্চিত্তই করলেন মিতুল। এরপর ৭৪ মিনিটে আরও একবার বাংলাদেশকে রক্ষা করেন শেখ রাসেলের এই গোলরক্ষক।
বারবার ফিলিস্তিনকে রুখে দেওয়া মিতুল অবশ্য ম্যাচটা শেষ করে উঠতে পারেননি। ম্যাচের ৮৪ মিনিটে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন মিতুল। অবশ্য শুধু মাঠই ছাড়েননি তিনি, অবস্থা খারাপ হওয়ায় মাঠ থেকে সরাসরি অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।
ম্যাচের শেষ মূহর্তে দেখা মেলে বড় নাটকীয়তার। লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ফিলিস্তিন ডিফেন্ডার মাহাজনে। অতিরিক্ত সময়টা তাই বাংলাদেশ কিছুটা সুবিধা পাবে বলেই ধরে নিয়েছিল। তবে হয়েছে উল্টো। ম্যাচের ৯৪ মিনিটে সেট পিস থেকে শেষ মূহর্তে বাংলাদেশের হৃদয় ভাঙে তেরেমাননি। ফিলিস্তিন শেষ পর্যন্ত মাঠ ছাড়ে জয় নিয়ে।
এই জয়ে ‘আই’ গ্রুপে তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী হলো। ৭ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বর জায়গাটা পাকা করলো ভালো করেই।