১০ নভেম্বর ২০২৪, ২:৫৮ পিএম
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ছোট রান তাড়ায় অস্ট্রেলিয়া জিতলেও ভালোই কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তান পেসাররা। দ্বিতীয় ম্যাচে তাদের হাত ধরে বড় জয় পাওয়া সফরকারীরা আরও একবার গুঁড়িয়ে দিলেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অর্ডার। শাহিম শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ ও হারিস রউফের পেসের সামনে খেই হারালেন অজি ব্যাটাররা। মামুলি রান তাড়ায় মোহাম্মদ রিজওয়ানের দল তুলে নিল দাপুটে জয়।
পার্থের গতিময় উইকেটে পুরো ইনিংস জুড়েই রানের জন্য সংগ্রাম করা অস্ট্রেলিয়া ৩১.৫ ওভারে গুটিয়ে যায় মাত্র ১৪০ রানে। ২৬.৫ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে সেই রান তাড়া করেছে পাকিস্তান। তিন ম্যাচের সিরিজে রিজওয়ানের দল জিতেছে ২-১ ব্যবধানে।
সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া আগে ব্যাটিং করে অলআউট হয়েছিল মাত্র ১৬৩ রানে। পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন রউফ, যিনি প্রথম ম্যাচে শিকার করেছিলেন তিন উইকেট। তৃতীয় ম্যাচে আরও একবার প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের কঠিন পরীক্ষা নিয়েছেন এই ডানহাতি পেসার।
আরও পড়ুন
রউফের ফাইফারে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিল পাকিস্তান |
তবে এই ম্যাচে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বোলিং করেছেন অন্য পেসাররা। জ্যাক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ককে শুরুতেই ফিরিয়ে দেন নাসিম শাহ। তার ও শাহিনের দারুণ বোলিংয়ে মাত্র ৫৬ রানে ৩ উইকেটে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার। একপ্রান্ত আগলে ব্যাট করা ওপেনার ম্যাথু শর্টকে ২২ রানে ফিরিয়ে দেন রউফ। এই ধাক্কাই আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি দলটি।
আরও পড়ুন
অস্ট্রেলিয়ার জন্য ব্রেট লি’র ‘বাইসন বল’ থিওরি |
আটে নামা সিন অ্যাবোটই কেবল যাওয়া-আসার মিছিলে কিছুটা লড়াই করেন। খেলেন দলীয় সর্বোচ্চ ৩২ রানের ইনিংস। তবে পুরো দলই যেখানে ব্যর্থ, সেখানে এই রানও পারেনি দলকে দুইশ রানের ধারেকাছেও নিতে।
তিনটি করে উইকেট নেন শাহিন ও নাসুম। রউফ নেন দুটি, আর একটি উইকেট যায় আরেক পেসার মোহাম্মদ হাসনাইনের ঝুলিতে।
আগের ম্যাচে ১৬৩ রান ডিফেন্ড করতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়া হেরেছিল ৯ উইকেটে। তার চেয়েও কম রান নিয়ে তাই বোলারদের জন্য করার ছিল না বলতে গেলে কিছুই। হয়েছেও তাই শেষ পর্যন্ত। বলা যায়, ম্যাচের প্রথম দশ ওভারেই সামান্যতম লড়াইয়ের সব সম্ভাবনা শেষ করে দেন পাকিস্তান ওপেনাররা।
আবদুল্লাহ শফিক কিছুটা রয়েসয়ে খেললেও সাইম আইয়ুব ছিলেন চেনা আগ্রাসী ছন্দে। অস্ট্রেলিয়ার অনভিজ্ঞ বোলিং লাইনআপকে এলোমেলো করে দেন শুরু থেকেই। যেভাবে ছুটছিলেন তিনি ও শফিক, তাতে দুজনের ফিফটি নিশ্চিত বলেই মনে হচ্ছিল। তবে ৮৪ রানের জুটি গড়ার পর একই ওভারে বিদায় নেন উভয় ব্যাটার।
প্রথমে ৩৭ রান করা শফিককে নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে বিদায় করেন ল্যান্স মরিস। এরপর বোল্ড করেন ৫২ বলে ৪২ করা সাইমকে। তবে তাতে পরাজয়ের ব্যবধানই কমেছে কেবল।
আনুষ্ঠানিকতা সারার বাকি কাজটা নির্বিঘ্নে করেন বাবর আজম ও রিজওয়ান। দুজন অপরাজিত থাকেন যথাক্রমে ২৮ ও ৩০ রানে।
কোচিং ক্যারিয়ারের একেবারের শুরুর দিনগুলোতে ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সহকারী ও ফিল্ডিং কোচ। এরপর দীর্ঘ একটা সময় ছিলেন স্রেফ ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচিং নিয়েই। অভিজ্ঞতায় পোক্ত হয়ে মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন সম্প্রতি আবার ফিরেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি)। কাজ করবেন সহকারী কোচ হিসেবে। অভিজ্ঞ এই কোচ মনে করেন, জাতীয় দলের সাথে তার কিছু কাজ এখনও বাকি রয়ে গেছে।
প্রথম দফায় ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলের সাথে কাজ করেন সালাহউদ্দিন। সেই সময়ে তার অধীনে ছিলেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালরা। এরপর নানা সময়ে বাংলাদেশ দলে তার যুক্ত হওয়ার খবর আসলেও তা আর বাস্তবে রুপ নেয়নি। মাঝের এই সময়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সালাহউদ্দিন দুহাতে সাফল্যের দেখা পেয়েছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ও পরীক্ষিত কোচও তিনি। এরপরও জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ খুঁজে পাচ্ছেন তিনি।
রোববার সাংবাদিকদের সাথে এক আলাপচারিতায় সালাহউদ্দিন শুনিয়েছেন দেশের ক্রিকেটের জন্য অবদান রাখার তাগিদের কথা। “আমার কাছে মনে হয়, এখন সঠিক সময়। আমি হয়তো কোচিং আর বেশি দিন নাও করাতে পারি। হয়ত আর চার-পাঁচ বছর। তাই আমার মনে হয়, এটাই সেরা সময়। আমার দীর্ঘ কোচিং ক্যারিয়ারের শেষে আমি যদি আরও একটা প্রজন্মকে সাহায্য করতে পারি, তাহলে সেটা আমার নিজের কাছেও ভালো লাগবে। আপনি শুধু সব জেনে গেলেন, কিন্তু কোনো প্রদীপ জ্বালালেন না, সেটা তো ঠিক হবে না। এই কাজটা যদি ভালোভাবে করতে পারি, কিছুটা সাহায্য হলেও আমি মনে করি সেটা ভালো হবে।”
সালাউদ্দিনের সাথে বিসিবি চুক্তি করেছে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত। সালাহউদ্দিনের দলের সাথে কাজটা শুরু হবে চলতি মাসের ক্যারিবিয়ান সফর দিয়ে। সেটা শেষ হতেই আবার চলে আসবে বিপিএলের ব্যস্ততা। ফলে সব মিলিয়ে কাজ করার জন্য তিনি পাবেন কিছুটা কম সময়ই।
তবে অভিজ্ঞতা থেকে এর মধ্যেই যতোটা সম্ভব খেলোয়াড়দের শাণিত করতে চান সালাহউদ্দিন। “চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত সময় যতটুকুই হোক না কেন, আমি যদি কারও জীবনে সামান্যতম প্রভাব রাখতে পারি, তাহলে সেটাই সার্থকতা হবে বলে মনে করি। আমি হয়তো রাতারাতি অনেক পরিবর্তন আনতে পারব না। কিন্তু আমার একটা কথা, বা একটা কিছুতে যদি তার জীবনে কিছু পরিবর্তন হয়, তাহলে সেটাই আমার অনেক বড় সার্থকতা হবে।”
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরুর কথা থাকলেও এরই মধ্যে কয়েকজন টেস্ট দলের খেলোয়াড়ের সাথে অনুশীলনে দেখা যাচ্ছে সালাহউদ্দিনকে। তার ইচ্ছা, সব উপায়েই সহকারী কোচ হিসেবে দলকে সাহায্য করা। “চেষ্টা করব আমাদের ছেলেরা যেন আরেকটু আত্মবিশ্বাসী হয়। সেই সাথে আমাদের যে বিদেশি কোচরা আছে, তাদের সাথে যোগাযোগটা যেন আরেকটু ভালো সেদিকে যায় সেই লক্ষ রাখব।”
রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে দশ বছরের বেশি সময় ধরে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলা থেকে বিরত আছে ভারত ও পাকিস্তান। ফলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই দেখার অন্যতম মূল ও প্রধান মঞ্চ হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন আইসিসি ইভেন্ট। ব্যতিক্রম হতে যাচ্ছে না আসছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও। তবে পাকিস্তানে হতে যাওয়া এই আসর খেলতে ভারত দেশটিকে যেতে বেঁকে বসেছে। পাকিস্তানও নমনীয় না হয়ে প্রয়োজনে ভারতকে ছাড়াই টুর্নামেন্ট এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। তবে দেশটির সাবেক কিপার-ব্যাটার রশিদ লতিফ মনে করেন, এই দল ছাড়া আইসিসির যেকোনো ইভেন্টই মূল্যহীন হয়ে যাবে।
লম্বা সময় ধরে ভারত প্রতিবেশী পাকিস্তানে না গেলেও পাকিস্তান দুটি বিশ্বকাপ খেলতে এখন পর্যন্ত ভারতে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপও। তবে ভারতের অবস্থান আগের মতোই। পাকিস্তানের মাটিতে খেলতে অনীহার কারণে তারা এরই মধ্যে আইসিসিকে জানিয়ে দিয়েছে হাইব্রিড মডেলে টুর্নামেন্ট আয়োজনের। এর এর জবাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান মহসিন নকভি। সাবেক ক্রিকেটারদের অনেকেই দাবি তুলছেন ভারতকে বাদ দিয়েই সব দল নিয়ে খেলার।
সম্প্রতি স্থানীয় নিউজ শো-তে এই প্রসঙ্গে লতিফ বলেছেন, এই বিষয়টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। “শুধুমাত্র পাকিস্তান আর ভারত আছে বলেই আইসিসি টিকে আছে। পাকিস্তান সরকারও যদি ভারতের মতো বলে যে, আমরা খেলব না, তাহলে আইসিসির কোনো লাভ হবে না। কারণ কেউ আর ম্যাচ দেখবে না। এটা আমরা বলতে পারি যে ভারত দ্বিপাক্ষিক ম্যাচ খেলতে চায় না। তবে আপনি আইসিসি ইভেন্টগুলোকে না করতে পারবেন না, কারণ আপনি ইতিমধ্যেই এখানে খেলার জন্য চুক্তি করেছেন। ভারতকে (পাকিস্তানে না যাওয়ার) শক্ত কারণ দেখাতে হবে। ভারত যদি এই সময় না আসে, তাহলে পাকিস্তান টুর্নামেন্টে অংশ না নেওয়ার মাধ্যমে বড় পদক্ষেপ নেবে।”
দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে ভারতে না গেলেও আইসিসি ইভেন্টে নিয়ম মেনে দুইবার ভারতে গেছে পাকিস্তান। তবে ভারত এমনকি এশিয়া কাপ খেলতেও দল পাঠায়নি পাকিস্তানে। ফলে স্রেফ ভারতের ম্যাচগুলো আয়োজন করতে হয়েছে ভিন্ন আরেকটি দেশে।
এবারও ভারত ক্রিকেট বোর্ড একই দাবি তোলায় হতাশ সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক লতিফ। “এটা যদি একটা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বা এশিয়া কাপ হয়, তাহলে দলগুলিকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ভারত সেখানে খেলতে চায় কি না। কিন্তু এটা একটা আইসিসি ইভেন্ট। চক্রটি ২০২৪-২০৩১ সালের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে। সব ব্রডকাস্টার এবং স্পনসররা এই ব্যাপারে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন এই মর্মে যে, দলগুলো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বা বিশ্বকাপে অংশ নেবে।”
সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে হওয়ার কথা রয়েছে পরবর্তী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।