ম্যাচ শেষেই উপহার পেলেন একটা জার্সি। এই জার্সি কেবল জার্সিই না, অর্জনের আনন্দও। কেবল অর্জন? এমন দিনে ফরহাদ হোসেন মনে করতে পারেন নিজের দীর্ঘ ১৯ বছরের শ্রমের কথাও, যেখানে মিলেমিশে আছে উথান-পতনের অজস্র গল্প।
বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন সম্মানের বিদায় খুব কম ক্রিকেটারেরই মিলে। মাঠ থেকে রাজার বেশে যেখানে অনেক বড় বড় নামই বিদায় নিতে পারে না, সেখানে সেটাই করতে পারলেন ১৯ বছর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা এই রাজশাহীর ক্রিকেটার।
ফরহাদের পরিবারের সদস্যরা হাজির ছিলেন আবেগঘন দিনটিতে। তার পথচলা শুরু হয়েছিল ২০০৫ সালের মার্চে, রাজশাহী স্টেডিয়ামে। সেই রাজশাহীতেই থামছেন ঘরের ছেলে। সেদিন প্রতিপক্ষ দলে খেলেছিলেন হান্নান সরকার, আর এদিন জাতীয় নির্বাচক হান্নানের হাত থেকেও মিলল সম্মাননা।
আরও পড়ুন
ঘরোয়া ক্রিকেট কম খেলাই লিটন-শান্তদের ভরাডুবির কারণ, মত বাশারের |
একই দলে ১৯ বছর আগে খেলেছিলেন খালেদ মাসুদ পাইলট, এদিনও হাজির ছিলেন। তবে ভিন্ন ভূমিকায়।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ঠিকই রাঙিয়েছেন ফরহাদ। ১৬১ ম্যাচ খেলেছেন ১৯ বছরে। ৯ হাজার পেরোনো রান নামের সঙ্গে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যে কীর্তি আছে কেবল ফরহাদ ছাড়া আর মাত্র তিন বাংলাদেশির।
৪৬ ফিফটি সাথে ফরহাদের নামের পাশে রয়েছে ১৮ সেঞ্চুরিও। সর্বোচ্চ ২১৬ রানের ইনিংসে ফরহাদ জানান দিয়েছেন, বড় ইনিংসও খেলতে পারেন রাজশাহীর অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।
ফরহাদের ব্যাটিং গড় ৩৬ থেকে সামান্য কম। ১৯ বছর ধরে ৩৫ গড় ধরে রাখাও আর কম কীসে? অন্য বড় নামের হয়তো তারকাখ্যতিও জোটেনি কখনো জাতীয় দলে না খেলা এই ফরহাদের। তবে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের চষে বেড়িয়েছেন সর্বত্রই।
আরও পড়ুন
৩ বছর পর ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরছেন কামিন্স |
১৯ বছরে ১৯ হাজার বল ব্যাটিং করেছেন। ৯ হাজার রান পেরোনো ফরহাদের নামের সাথে কার্যকরী ১৬৫ উইকেট। ফিল্ডিংয়েও ছিলেন দলের অন্যতম সেরা। ক্যাচের ডাবল সেঞ্চুরিও রয়েছে।
অভিষেক ম্যাচে ব্যাট হাতে করেছিলেন ২৪ আর ৩৬ রান, ম্যাচে নিয়েছিলেন এক উইকেটও। বিদায়ী ম্যাচে ২৬ আর ৯ রান আর সাথে সাক্ষী হয়ে থাকল অসংখ্য সম্মাননা।
৩৭ বছর ২৭৬ দিন বয়সে থামলেন ফরহাদ হোসেন। হয়তো ক্রিকেটার পরিচয়ে বড় তারকা হতে পারেননি, তবে ৯ হাজার প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট রানের ফরহাদ হোসেন নিজেকে সফল ভাবতেই পারেন। ৯ হাজার রান কি আর চাট্টিখানি কথা। ফরহাদের অর্জনই তার হয়ে কথা বলবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে।
দিন যত যাচ্ছে, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ১১তম আসর নিয়ে উন্মাদনা বেড়েই চলেছে। নানা আয়োজনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) চেষ্টা করছে এবারের আসরকে সবচেয়ে স্মরণীয় করে রাখতে। সেই ধারায় এবারের বিপিএলের মাসকটও বেছে নেওয়া হয়েছে, যার নাম রাখা হয়েছে ডানা ৩৬। শান্তির প্রতীক হিসেবে সেখানে দেখা যাবে একটি সুসজ্জিত পায়রাকে।
বিপিএলের মাসকটটিকে স্বাধীনতা এবং ক্রীড়া চেতনার স্থিতিস্থাপকতার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ডানা বিস্তৃত, আত্মবিশ্বাসী, আনন্দদায়ক হাসিতে পায়রাটি গ্রাফিতি শিল্পে সজ্জিত একটি ক্রিকেট ব্যাট ধরে আছে। এর পালকের রঙিন গ্রাফিতি প্যাটার্ন এবং ব্যাট আমাদের স্বাধীনতা, ইতিবাচক শক্তি এবং সাংস্কৃতিক গর্বের থিম উপস্থাপন করে। এই প্রাণবন্ত মাসকটটি একটি উজ্জীবিত চেতনা বহন করে, যা ক্রিকেট নিয়ে রোমাঞ্চ এবং উদযাপনকে ফুটিয়ে তোলে।
আরও পড়ুন
বিপিএলের টাইটেল স্পন্সর ডাচ-বাংলা ব্যাংক |
এই পায়রার মাসকটটিকে স্বাধীনতার চেতনার সাথে মেলবন্ধন ঘটানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা খেলাধুলার একটি অপরিহার্য অংশ এবং ক্রিকেট সংস্কৃতিরও একটি মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। পায়রাকে শান্তি এবং স্থিতিস্থাপকতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, যা একটি জাতির শক্তি এবং ঐক্যকে প্রতিফলিত করে। মাসকটের গ্রাফিতিটি আধুনিক, তারুণ্যের স্পর্শময়, যা সমসাময়িক ক্রিকেট ভক্তদের প্রগতিশীল, প্রাণবন্ত প্রাণশক্তির সাথে আমাদের স্বাধীনতার ঐতিহ্যগত মূল্যবোধকে একসুতোয় গেঁথেছে।
এবারের বিপিএল শুরু হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। টুর্নামেন্টের পর্দা উঠবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি। এবারের আসরে অংশ নিচ্ছে সাতটি দল -
রংপুর রাইডার্স, ঢাকা ক্যাপিটালস, চিটাগং কিংস, দুর্বার রাজশাহী, ফরচুন বরিশাল, খুলনা টাইগার্স ও সিলেট স্ট্রাইকার্স।
দীর্ঘদিন ধরে আছেন জাতীয় দলের বাইরে। খেলে যাচ্ছিলেন কেবল ঘরোয়া ক্রিকেট। দেশের ক্রিকেটের অন্যতম অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস ঘোষণা দিয়েছেন টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের। বুধবার নিজেই নিশ্চিত করেছেন বিষয়টি।
নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করে লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর কথা জানিয়েছেন ইমরুল। সাদা বলের ক্রিকেটে অনেকটা সময় ধরেই বাংলাদেশ দলের বাইরে থাকলেও এই দুটিতে খেলার দুয়ার খোলা রেখেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার।
আরও পড়ুন
‘অভাগা যেদিকে চায়, সাগর (ইমরুল) শুকিয়ে যায়’ |
২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে এই ফরম্যাটে পথচলা শুরু হয় ইমরুলের। শেষবার খেলেছেন ২০১৯ সালের নভেম্বরে, ভারতের বিপক্ষে। মাঝের এই সময়ে খেলেছেন ৩৯টি ম্যাচ। ৭৬ ইনিংসে ২৬.২৮ গড়ে রান করেছেন ১ হাজার ৭৯৭। সেঞ্চুরি তিনটি আর ফিফটি চারটি।
টেস্টে ইমরুলের সর্বোচ্চ ইনিংসটি এসেছিল ২০১৫ সালে। খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ড্র হওয়া ম্যাচে খেলেছিলেন ১৫০ রানের দারুণ এক ইনিংস। ওই ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম ইকবালের সাথে ওপেনিং জুটিতে ইমরুল যোগ করেছিলেন রেকর্ড ৩১২ রান।
আরও পড়ুন
ছয়ের রেকর্ডে তামিমের সঙ্গী ইমরুল |
চলতি এনসিএলে খেলছেন ইমরুল। শেষ ম্যাচে সিলেটের বিপক্ষে দুই ইনিংসে করেছেন যথাক্রমে শূন্য ও ৭১ রান।