ধীরগতির উইকেটে আগের ম্যাচেও রান তাড়ায় খেলেছিলেন দারুণ এক ইনিংস। তবে ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেননি। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আরেকটি ফিফটি করা নাজমুল হোসেন শান্ত আশা জাগিয়েছিলেন শতকের। কিন্তু পারেননি। তবে এই দফায় বাংলাদেশ অবশ্য জয়ের দেখা পেয়েছে। এরপরও তাই আক্ষেপ রয়ে গেছে বাংলাদেশ অধিনায়কের। শান্ত মনে করেন, তার আরও লম্বা সময় ব্যাট করা উচিত ছিল।
অবশ্য একই কথা প্রথম ম্যাচের পরও বলেছিলেন শান্ত। সেদিন তার বিদায়ের পরই ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস। শারজাহতে নতুন ব্যাটারদের জন্য রান করাটা কঠিন বলেই সেট ব্যাটারদের ওপর দায়িত্ব থাকে বেশি। ৭৭ রান করা শান্ত আউট হওয়ায় তাই এক পর্যায়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ২৫২ রানের স্কোর পেয়ে ম্যাচও জেতে ৬৮ রানে।
দলের জয়ে খুশি হলেও তাই ম্যাচের পর শান্ত নিজের ইনিংসের কমতি তুলে ধরেন। “একটু ভালো লাগছে কিন্তু তবুও কিছুটা আক্ষেপও আছে। আমাদের পরের ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সত্যি বলতে আমি খুশি নই। স্পিনের বিপক্ষে খেলাটা এই উইকেটে কঠিন ছিল, আর সেই কারণে সম্ভবত আমাকে আরেকতু একটু বেশি সময় ব্যাট করতে হত।”
শান্তর আক্ষেপ আরও দীর্ঘ হতে পারত, যদি না ১৮৪ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর সপ্তম উইকেটে ৪৬ রান করতেন অভিষিক্ত কিপার-ব্যাটার জাকের আলি অনিক ও স্পিনার নাসুম আহমেদ, যিনি এই ম্যাচ দিয়েই এসেছেন একাদশে। বিশেষ করে জাকের দারুণ ফিনিশিং দেন ৩৭ রানের অপরাজিত ইনিংসে। ব্যাটিংয়ের পর বল হাতেও ৩ উইকেট নিয়ে জয়ে অবদান রাখেন নাসুম।
নিজ নিজ ভূমিকায় এই দুজনের অবদান তাই প্রশংসা পেল অধিনায়কের। “মিরাজ ও নাসুম যেভাবে বোলিং করেছে, তা প্রশংসার যোগ্য। আর নতুন বলে আমরা যেভাবে শুরু করেছি, তাসকিং ফিরিয়ে দিল গুরবাজকে। সে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটার। তারা (জাকের-নাসুম) যেভাবে ফিনিশিং দিয়েছে, সেটা আমাদের মোমেন্টাম এনে দিয়েছে। জাকের এবং লোয়ার মিডল অর্ডারের ব্যাটারদের কাছে থেকে আমি এমনটাই চাই।”
আর আফগানিস্তান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদি বলেছেন, জাকের ও নাসুমের ওই জুটিই তাদের সর্বনাশ করেছে। “শেষ পাঁচ ওভারে তারা ৪০ রান (৫২) করেছে। এটা একটা ব্যবহার করা উইকেট ছিল এবং এখানে পরে ব্যাটিং করা কঠিন। আমাদের প্রথম ১০ ওভার ভালো ছিল না। (বোলিংয়ে) শেষ পাঁচ ওভার আমাদের জন্য খরুচে ছিল। ব্যাটিংয়ে আমরা টানা কিছু উইকেট হারিয়েছি। কিছু জুটি গড়া উচিত ছিল।”
প্রথম দুই ম্যাচে অন্য ব্যাটাররা রানের জন্য সংগ্রাম করলেও নাজমুল হোসেন শান্ত ছিলেন সাবলীল। চোটের কারণে অধিনায়ককে হারানো বাংলাদেশ তৃতীয় ম্যাচে একশর আগেই চার উইকেট হারিয়ে পড়ে গেল প্রবল চাপের মুখে। তবে বুক চিতিয়ে লড়ে দুর্দান্ত এক জুটিতে দলকে উদ্ধারে এগিয়ে এলেন অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ ও অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ। দুজনের ফিফটিতে শুরুর চাপ কাটিয়ে বাংলাদেশ পেল লড়াই করার মত একটা পুঁজি।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে টসে জিতে আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশের স্কোর ৮ উইকেটে ২৪৪।
ম্যাচের আগে বড় ধাক্কায় বাংলাদেশ। কুঁচকির চোটে এই ম্যাচ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকে ছিটকে যান শান্ত, যিনি ছিলেন দারুণ ছন্দে। নিজের ১০০তম ওয়ানডেতে তাই অধিনায়কত্বের দায়িত্ব বর্তায় মিরাজের কাঁধে।
আরও পড়ুন
আগে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, নাহিদ রানার অভিষেক |
তবে আগে ব্যাটিং নেওয়ার পর তার দলের চিত্রটা সুবিধার হয়নি প্রথম ২০ ওভারে। প্রথম দুই ম্যাচে ত্রিশের ঘরে দুটি ইনিংস খেলা সৌম্য সরকার এদিনও ভালো শুরু পান। তবে সেটা বড় করতে পারেননি। আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের বলে বোল্ড হওয়ার আগে তিন চারে করেন ২৪ রান।
৫৩ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙার চার রান বাদেই সাজঘরের পথ ধরেন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। পুরো সিরিজেই হতাশাজনক ব্যাটিং করা তাওহীদ হৃদয় আরও একবার ব্যর্থ হন। শুরু থেকেই নড়বরে থাকার পর আউট হন রশিদ খানের বলে।
মিরাজের সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটের শিকার হন এই ম্যাচ দিয়ে একাদশে ফেরা জাকির হাসান। বাংলাদেশের স্কোর তখন ৪ উইকেটে মাত্র ৭২।
আরও পড়ুন
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকেও ছিটকে গেলেন শান্ত |
এরপরই শুরু হয় মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহর প্রতিরোধ। একজন ব্যাট হাতে ভালো ছন্দে থাকলেও অন্যজন এই ফরম্যাটে সাম্প্রতিক সময়ে ছিলেন না একেবারেই রানের মধ্যে। মাহমুদউল্লাহ সেই চাপ কাটিয়ে উঠতে শুরু থেকেই করেন ইতিবাচক ব্যাটিং। আর জুটি গড়ায় মনোযোগ দেওয়া মিরাজ ব্যাটিং করেন কিছুটা ‘টেস্ট’ মেজাজে।
ফলে মাহমুদউল্লাহ যেখানে ব্যাট করেন প্রায় ৮০-৯০ স্ট্রাইক রেটে, সেখানে মিরাজ প্রায় পুরো ইনিংসেই স্ট্রাইক রেট রাখেন ৬০-এর মধ্যে। তবে উইকেটের আচরণ ও পরিস্থিতি বিবেচনায় একটা বড় জুটির ছিল ভীষণ প্রয়োজন। আর সেই কাজটা ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে করেন দুজন।
তাদের ক্রমেই জমে ওঠা জুটি ধীরে ধীরে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনে। আফগান বোলারদের হতাশ করে দলকে এনে দেন শক্ত ভিত। একে একে দুজনই তুলে নেন ফিফটি। শেষ পর্যন্ত ১৩৫ রানের জুটির ইতি ঘটে মিরাজের বিদায়ে। তার আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক ১১৯ বলে করেন ৬৬ রান।
আরও পড়ুন
নেই অধিনায়ক শান্ত, কেমন হবে বাংলাদেশে একাদশ? |
এরপর অন্য ব্যাটাররা কেউই পারেননি বলার মত অবদান রাখতে। একেবারে শেষ ওভার পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান কেবল মাহমুদউল্লাহ। যেভাবে ব্যাট করছিলেন, তাতে শতকটা প্রাপ্যই ছিল তার। তবে ইনিংসের শেষ ওভারে সেই সমীকরণ আর মেলাতে পারেননি অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। রান আউটে কাটা পড়েন ৯৮ রানে। সেঞ্চুরি মিস করলেও খুশি হতেই পারেন দলের বিপদে দারুণ এক ইনিংস খেলতে পেরে।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচের আগে বড় ধাক্কা খাওয়া বাংলাদেশকে মাঠে নামতে হচ্ছে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে। দারুণ ফর্মে থাকা এই বাঁহাতি ব্যাটার কুঁচকির চোটে ছিটকে গেছেন এই ম্যাচ থেকে। তার জায়গায় নিজের শততম ওয়ানডে ম্যাচে অধিনায়কত্ব করবেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭৭ রান করা শান্তরা জায়গায় দলে এসেছে টপ অর্ডার ব্যাটার জাকির হাসান। একাদশে পরিবর্তন এসেছে আরেকটি। পেসার তাসকিন আহমেদের জায়গায় এই ম্যাচ খেলবেন নাহিদ রানা। আগেই টেস্ট অভিষেক হয়ে যাওয়া এই তরুণ পেসারের এবার হচ্ছে সাদা বলের অভিষেক।
আরও পড়ুন
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকেও ছিটকে গেলেন শান্ত |
তিন ম্যাচের সিরিজে সমতা ১-১। তৃতীয় ম্যাচটি সরাসরি দেখতে চোখ রাখুন টি-স্পোর্টস নেটওয়ার্কে।
বাংলাদেশ একাদশ :
মেহেদি হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, সৌম্য সরকার, জাকির হাসান, তাওহীদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ, জাকের আলি অনিক,, নাসুম আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, নাহিদ রানা।