সকালের সেশনে দক্ষিণ আফ্রিকা যেভাবে ব্যাট করল, সেখানেই ম্যাচের লাগাম অনেকটাই হাতছাড়া হয়ে যায় বাংলাদেশের। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে দ্বিতীয় সেশনে বল হাতে যেমনটা করা দরকার, সেটাও করতে পারেনি স্বাগতিকরা। কাইল ভেরেইনের দারুণ এক সেঞ্চুরিতে তাই বিশাল লিড পেয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। আরও একবার টপ অর্ডারের ব্যাটারা দলকে হতাশ করলেন। তবে শেষবেলায় বাংলাদেশের হয়ে লড়াই চালালেল প্রথম ইনিংসের সর্বোচ্চ রান করা মাহমুদুল হাসান জয়। যোগ্য সঙ্গ দিলেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম।
মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোর ৩ উইকেটে ১০১। ৩৮ রানে অপরাজিত আছেন জয়, আর মুশফিকুরের রান ৩১। নাজমুল হোসেন শান্তর দল এখনও পিছিয়ে ১০১ রানে। বাংলাদেশের ১০৬ রানের জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা থেমেছিল ৩০৮ রানে।
বাংলাদেশের মূল সর্বনাশটা করেছেন মূলত উইয়ান মুল্ডার ও ভেরেইন দুজনে মিলেই। আগেরদিনের জুটি আরও পোক্ত হয় দ্বিতীয় দিন সকালে। দারুণ সব শট খেলে প্রতিপক্ষের বোলারদের আরও চাপে ফেলে দিয়ে সপ্তম উইকেটে তারা গড়েন ১১৯ রানের জুটি, যা এশিয়ার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার সপ্তম উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি।
শেষ পর্যন্ত লাঞ্চ বিরতির আগে আক্রমণে ফিরে বিপজ্জনক জুটির ভাঙন ধরান হাসান মাহমুদ। দারুণ একটি ওভারে প্রথমে মুল্ডারকে ৫৪ রানে ফেরানোর পরের বলে বোল্ড করেন দেন কেশভ মহারাজকে। তবে ২২৭ রানে ৮ উইকেট হারানোর পরও দক্ষিণ আফ্রিকা হাল ছেড়ে দেয়নি।
বোলারদের নিয়ে আরও লড়াই চালিয়ে যান ভেরেইন। তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের ভোগান্তি বাড়িয়ে নবম উইকেটে ডেন পিয়েডটের সাথে গড়েন ৬৬ রানের জুটি। ৩২ রান আসে স্পিনার পিয়েডটের ব্যাট থেকে। চাপের মুখে নেমে অসাধারণ ব্যাটিং করা ভেরেইনের ইনিংসের ইতি ঘটে ১১৪ রানে, স্টাম্পড হন মেহেদি হাসান মিরাজের বলে।
বাংলাদেশের হয়ে পাঁচ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার তাইজুল ইসলাম। তিন উইকেট হাসানের, আর দুই উইকেট যায় মিরাজের ঝুলিতে।
২০২ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাটিং করতে নেমে সেই সময়েই ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো উইকেটেও দলকে হতাশ করেন সাদমান ইসলাম ও মুমিনুল হক। কাগিসো রাবাদার করা তৃতীয় ওভারে প্রথম বলে খোঁচা দিতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাদমান। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই বাউন্সারে তাল সামলাতে না পেরে ভারসাম্য হারিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে তৃতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন অভিজ্ঞ মুমিনুলও।
মাত্র চার রানেই দুই উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে তখন রীতিমত ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ের শঙ্কা। তবে প্রথম ইনিংসের মত এবারও হাল ধরেন হয়। অধিনায়ক শান্তও ব্যাটিং করছিলেন ভালো ছন্দে। বাঁহাতি এই ব্যাটার খেলেন কয়েকটি আগ্রাসী শটও, যার মধ্যে ছিল বেরিয়ে আসে মহারাজকে মাথার ওপর দিয়ে মারা ছক্কাও।
তবে সেই মহারাজের বলেই শেষ হয় তার সম্ভাবনাময় ইনিংসের। তবে এখানে শান্তর করার ছিল সামান্যই। অফস্ট্যাম্পের বাইরে পিচ করে বলটি লম্বা টার্ন নিয়ে আঘাত হানে প্যাডে। নুয়ে পড়ে বলটি ঠেকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করলেও পারেননি। ২৩ রান আসে শান্তর ব্যাট থেকে।
এই টেস্টে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের সেরা সময়টা আসে এরপরই। ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে জয় ও মুশফিকুর রান বের করেন সিঙ্গেলস ও বাউন্ডারিতে। তবে বিপত্তি প্রায় ঘটেই যাচ্ছিল দিনের একদম শেষভাগে।
পিয়েডটের বলে স্লগ করতে গিয়ে মিস করেন জয়, বাউন্স থাকায় সেটি লাফিয়ে ধরেন দক্ষিণ আফ্রিকার কিপার ভেরেইন। জয়ও বেরিয়ে গিয়েছিলেন ক্রিজ ছেড়ে। ফলে বলটি লুফে নিয়ে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন ভেরেইন। পড়িমরি করে ক্রিজে ফেরার চেষ্টা করেন জয়। শেষ পর্যন্ত সেটা আর বিফলে যায়নি। অনেকটা সময় রিপ্লে দেখার পর নটআউট ঘোষণা করেন থার্ড আম্পায়ার। এরপরই দিনের খেলার ইতি টানা হয়।